সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

পারভেজ সাজ্জাদ এম এর to Rudra প্রতি রুদ্র

শিরোনাম  to Rudra প্রতি রুদ্র
parvez sazzad m
to Rudra প্রতি রুদ্র


রুদ্র, কবিতা লেখার স্পর্ধা নেই, তাই একটা খোলা চিঠি লিখছি তোমায়,
যেমন তুমি বলেছিলে ভালো আছি, ভালো থেক আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ,
বড়ো কষ্টে আছি, নিঃশ্বাসে কষ্ট হয়, অনুভূতি গুলো ভোঁতা হয়ে আসছে,
বাংলাদেশে এখন সবাই খুব খারাপ আছে, দেশ তলে তলে ফাঁক হয়ে যাচ্ছে,
মানুষ গুলো দলে দলে ভাগ হয়ে যাচ্ছে, বড়ো অস্থির সময়,
তুমি কি ভালো আছো? আমরা খুব খারাপ আছি, পূর্ব পুরুষের ঋণের বোঝা,
বাড়তি দামে বাড়তি ক্ষুধা, রাজনৈতিক ভাঁড়ামো, ডিজিটাল অত্যাচার,
কি বলব মাঝে মাঝে মনে হয় জঙ্গলে চলে যাই, কিন্তু ওদের স্যাটেলাইট সেখানেও পৌঁছে গেছে,
যেটুকু মানবিক বোধ এখনও বেঁচে আছে তাও খরচ হয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তির সাথে খাপ খাওয়াতে ।
আজকাল আমাদের হাতে আর কিছু নেই, তোমার জামানায় মোবাইল ফোন ছিলনা,
আইপ্যাড ছিলনা, হাতে কলম ছিল, চোখে ছিল জ্যোৎস্না, আঙ্গিনায় দু একটা জোনাকি,
আকাশে ঘুড়ি, ভেন্টিলেটারে পাখীর বাসায় কিচির মিচির, এখন চড়ুই আসেনা আর,
তোমার মতোই অভিমানে চলে গেছে হজমী ওয়ালা, লেইস ফিতা লেইস, লাটিম ওয়ালারাও
মনিটরে চোখ রেখে এ চিঠি লিখতে লিখতে চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে,
তারপরও আমাদের বেঁচে থাকতে হচ্ছে, তোমার কি ফিরে আসতে ইচ্ছে করে আবার?
বাংলাদেশে আজ আর প্রতিবাদী কণ্ঠের কদর নেই, কবিতা ভালোবেসে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকতে কেউ চায়না, যে হো মো এরশাদ তোমার মতো প্রতিভাকে আঁস্তাকুড়ে ছুঁড়ে দিয়েছিল, দেশকে রক্ষিতার শরীরের মতো কুঁড়ে খেয়েছিল, সে আজ রাজনৈতিক অস্ত্র, সব জোট তাকে চায়,
গন ধর্ষণের পর যখন অসহায় ধর্ষিতাকে যখন আদালতে জিগ্যেস করা হয় প্রমান দিন,
তখন স্বর্গের ছাঁদ ভেঙে পড়ে, পূর্ণিমার চাঁদ খসে পড়ে, আমাদের দেশকেও একদিন কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হবে, তখন ধর্ষকেরা স্বর্গে থাকবে না নরকে জানিনা, তুমি মরে গিয়ে ভালো করেছ ।
তারপরও যদি ফিরে আসতে চাও, জেনে রাখ এখন শাহবাগ আর সৃজনশীলদের বিচরণ ক্ষেত্র নয়,
এখন আজিজ সুপারে শিল্প সাহিত্য নিয়ে তর্ক বিতর্ক করার নিবিড় নীড় নয়, নীলক্ষেতে পুরনো বইয়ের গন্ধ নিতে আমরা হেঁটে হেঁটে দিন পার করিনা, তুমি কি কম্পিউটার জানো, অভ্র, ফোনেটিক ইউনি কোড? কিংবা গুগল?
তথ্যের মহা সমুদ্রে কোনটা রেখে কোনটা নেবে বুঝে উঠতে তোমাকে ৩৩ বছরের কোর্স করতে হবে,
ভালো কথা, পাছে ভুলে যাই, কিছু খবর দেই, তোমার জীবনী উইকিতে আছে, তোমার বই আছে লক্ষ লক্ষ ওয়েব সাইটের ভাণ্ডারে, তোমার নামে গুগোলে সার্চ দিলে হাজার পেজ রেজাল্ট দেয়, তোমার নামে হ্যাশ ট্যাগ করা যায়, আরও অনেক অনেক কিছু, কোনটা বলি, কোনটা শুনবে? তোমার দর্শন নিয়ে বলি, আজকাল বাংলাদেশ ও পৃথিবীর সবার মিলন মেলা ফেসবুক, সেখানে তোমার নামে পাতা আছে,
তোমার অসংখ্য ভক্ত যে পাতাটাকে খুব করে লাইক *(লাইক +) সেটা চালায় যে, সে তোমার কবিতার পাশাপাশি নিজের ব্যাক্তিগত মত প্রকাশ করে যাচ্ছে অবাধে, তুমি বেঁচে থাকলে কষ্ট পেতে, একে আমি
ব্যাক্তিগত ভাবে চিনি, আমি কাছে ডেকে গালে একটা থাপ্পড় দিতে পারতাম, পারিনি, যেমন পারিনি
অন্যায়, অত্যাচার, নিপীড়ন, শোষণ ত্রাসন এসব কিছুর বিরুদ্ধেই বজ্র কণ্ঠে প্রতীবাদ করতে, পুলিশের গুলীর সামনে বুক পেতে দিতে, পারিনি সর্বচ্চ চিৎকারে জানিয়ে দিতে আমাদের অধিকার ।
আসলে নপুংসক, বেহায়া হয়ে গেছি, দেখেও না দেখার ভান করি, যেটুকু চেষ্টা করি, কেউ বোঝে না,
পাগল মনে করে, এই যে দিনের পর দিন অসহায় যন্ত্রনা নিয়ে গুহার ভেতরে পড়ে আছি,
মিছিলে শ্লোগানের দিন গুলো, রাতের আঁধারে দেয়াল লিখন, ধর্মঘটে টায়ারে আগুন, বেবি ট্যাক্সিতে
মাইকিং, না খেয়ে স্কুলে কলেজে সেমিনার, মিটিং, মঞ্চে গলা ফাটানো, লিটল ম্যাগাজিন,
সব মনে হয় কোনও অন্য এক জীবনের স্মৃতি, মুলোর লোভে ব্যাবহারিত গাধার মতো অর্থহীন লাগে সেদিনের নিজেকে, কিছুই হলনা, মা বাবা বোনের দীর্ঘ শ্বাস শুনতে পাই, উন্মাদ হয়ে যাবো একদিন
অনেক বড়ো হয়ে গেল, আসলে মনের বলতে গেলে আদি অন্ত থাকে না, মাত্রা থাকো না ।
মনের এত ক্ষোভ, এতো যন্ত্রনা জমা হয়ে আছে যে উথলে উঠলে থামতে চায় না, আজ এখানেই মুড়ে দিচ্ছি, আবার কোনও এক অস্থির সন্ধ্যায় তোমাকে লিখব, তোমার আকাশের ঠিকানায় ।
ইতি 28/01/14


 কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু ! নিচে দেখুন কমেন্ট বক্স

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্যারিসের চিঠি

প্যারিসের চিঠি শিরোনাম  : প্যারিসের চিঠি   লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রিয় আকাশি, গতকাল ঠিক দুপুরে তোমার চিঠি পয়েছি। খামের উপর নাম ঠিকানা পড়েই চিনতে পেরেছি তোমার হাতের লেখা; ঠিকানা পেলে কিভাবে লেখনি; কতদিন পর ঢাকার চিঠি; তাও তোমার লেখা, ভাবতে পারো আমার অবস্থা?? গতকাল প্যারিসে ঝরেছিলো এ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গা তুষারপাত। তামাক ফুরিয়ে গেছে আনতে পারিনি; এই প্রথম আমি অনেকটা সময় নিয়ে ভুলেছিলাম তামাকের গন্ধ। তোমার চিঠিতে পরিবর্তন আর বদলে যাওয়ার সংবাদ; তুমি কষ্ট পেয়ে লিখেছো - রাত্রির ঢাকা এখন নিয়নের স্নিগধতা ছেড়ে নিয়েছে উতকট সোডিয়ামের সজ্জা, আমাদের প্রিয় রমনা রেস্তোরা এখন কালের সাক্ষী, শীতের বইমেলা পরিণত হয়েছে মিনাবাজারে, টি এস সি'র চত্বরে যেন উপ্তপ্ত বৈরুত। বদলে যাওয়া কষ্টের অপর নাম স্বৃতি এখন তাই নিয়ে বুঝি মেতে আছো; এই পরবাসে আমার চোখের সামনেও বদলে যেতে দেখলাম কত সুদুর ইতিহাস- বালির বাধের মতন ভেসে গেল বার্লিন প্রাচীর ... ইংলিস চ্যানেলের তল দিয়ে হুইসেল বাজিয়ে চলছে ট্রেন; ইউরোপের মানচিত্র এখন রুটি হয়ে গেছে, ক্ষিদে পেলেই ছিড়ে ছিড়ে খাও, স্বাধীনতা মানেই যেন উদর পুর্তি...

কবি বিকাশ দাসের এক গুচ্ছ কবিতা সিঁড়ী এবং অন্যান্ন

নির্মল ভালবাসা

শিরোনাম : নির্মল ভালবাসা                      --- হেমন্ত রড্রিক্স  সমুদ্রের অতল গহ্বরে  শেওঁলা গুলো দিনে দিনে বৃদ্ধি পায়,  বুঝে উঠা হয়নি কখন মনের গভীরে বেসামাল ভালবাসা তেমনই দানা বাঁধলো ?  কেরোসিন পিদিম মিটি মিটি আলো দেয় মৃদু মলয় পরশে সে যেন আহ্লাদিত। তোমার মুখাবয়ব আলো আধারে  সে এক ভিন্ন জগত সৃষ্টিতে নিমগ্ন ।  মেঘের গর্জে ওঠাকে ভয় পেওনা  দ্যুতিময় ঘর্ষণের পরক্ষণেই বর্ষিত ধারা । শীতল বায়ু বহে সমান্তরাল । ধুয়ে মুছে শুভ্র সুশীল ধরাতল।  দীনতা, অসৌন্দর্য ক্ষণস্থায়ী দৃশ্যতই  সত্যি প্রেমের গভীরতা অপরিমেয় । বিশ্বাস, সমঝোতা যার মজবুত খুঁটি ।  মরণোত্তর তাজমহল নয়, জীবদ্দশায় হাতে হাত রেখে চলার  অঙ্গীকারই "নির্মল ভালবাসা"।  (সেপ্টেম্বর তিরিশ  সিনসিনিটী  বিমান বন্দর ওহাইও, আমেরিকা  - সকাল নয়টা ।) ( কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু ! নিচে দেখুন কমেন্ট বক্স)