সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

সৈয়দ শামসুল হক এর কবিতা "আমার পরিচয়"

সৈয়দ শামসুল হক এর কবিতা  "আমার পরিচয়"
সৈয়দ শামসুল হক এর কবিতা  "আমার পরিচয়"
শিরোনাম    আমার পরিচয়

আমি জন্মেছি বাংলায়
আমি বাংলায় কথা বলি।
আমি বাংলার আলপথ দিয়ে, হাজার বছর চলি।
চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে।
তেরশত নদী শুধায় আমাকে, কোথা থেকে তুমি এলে ?
আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে
আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে।
আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে
আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে।
এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে
এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে।
এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে
এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে।
আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে
আমি তো এসেছি কমলার দীঘি মহুয়ার পালা থেকে।
আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে
আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে।
এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে
এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে।
এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে
এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে।
আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে
আমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে।
এসেছি আমার পেছনে হাজার চরণচিহ্ন ফেলে
শুধাও আমাকে এতদূর তুমি কোন প্রেরণায় এলে ?
তবে তুমি বুঝি বাঙালি জাতির ইতিহাস শোনো নাই-
সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।
একসাথে আছি, একসাথে বাঁচি, আজো একসাথে থাকবোই
সব বিভেদের রেখা মুছে দিয়ে সাম্যের ছবি আঁকবোই।
পরিচয়ে আমি বাঙালি, আমার আছে ইতিহাস গর্বের-
কখনোই ভয় করিনাকো আমি উদ্যত কোনো খড়গের।
শত্রুর সাথে লড়াই করেছি, স্বপ্নের সাথে বাস;
অস্ত্রেও শান দিয়েছি যেমন শস্য করেছি চাষ;
একই হাসিমুখে বাজায়েছি বাঁশি, গলায় পরেছি ফাঁস;
আপোষ করিনি কখনোই আমি- এই হলো ইতিহাস।
এই ইতিহাস ভুলে যাবো আজ, আমি কি তেমন সন্তান ?
যখন আমার জনকের নাম শেখ মুজিবুর রহমান;
তারই ইতিহাস প্রেরণায় আমি বাংলায় পথ চলি-
চোখে নীলাকাশ, বুকে বিশ্বাস পায়ে উর্বর পলি।

সৈয়দ শামসুল হক 

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্যারিসের চিঠি

প্যারিসের চিঠি শিরোনাম  : প্যারিসের চিঠি   লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রিয় আকাশি, গতকাল ঠিক দুপুরে তোমার চিঠি পয়েছি। খামের উপর নাম ঠিকানা পড়েই চিনতে পেরেছি তোমার হাতের লেখা; ঠিকানা পেলে কিভাবে লেখনি; কতদিন পর ঢাকার চিঠি; তাও তোমার লেখা, ভাবতে পারো আমার অবস্থা?? গতকাল প্যারিসে ঝরেছিলো এ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গা তুষারপাত। তামাক ফুরিয়ে গেছে আনতে পারিনি; এই প্রথম আমি অনেকটা সময় নিয়ে ভুলেছিলাম তামাকের গন্ধ। তোমার চিঠিতে পরিবর্তন আর বদলে যাওয়ার সংবাদ; তুমি কষ্ট পেয়ে লিখেছো - রাত্রির ঢাকা এখন নিয়নের স্নিগধতা ছেড়ে নিয়েছে উতকট সোডিয়ামের সজ্জা, আমাদের প্রিয় রমনা রেস্তোরা এখন কালের সাক্ষী, শীতের বইমেলা পরিণত হয়েছে মিনাবাজারে, টি এস সি'র চত্বরে যেন উপ্তপ্ত বৈরুত। বদলে যাওয়া কষ্টের অপর নাম স্বৃতি এখন তাই নিয়ে বুঝি মেতে আছো; এই পরবাসে আমার চোখের সামনেও বদলে যেতে দেখলাম কত সুদুর ইতিহাস- বালির বাধের মতন ভেসে গেল বার্লিন প্রাচীর ... ইংলিস চ্যানেলের তল দিয়ে হুইসেল বাজিয়ে চলছে ট্রেন; ইউরোপের মানচিত্র এখন রুটি হয়ে গেছে, ক্ষিদে পেলেই ছিড়ে ছিড়ে খাও, স্বাধীনতা মানেই যেন উদর পুর্তি ...

ফুল ! তুমি ও এক নারী

শিরোনাম    ফুল !  তুমি  ও  এক  নারী                       শ্যামল সোম নারী ফুল হয়ে, ফুঁটছে  হৃদয়  কাননে, কাননের  নানা  গাছে, আহাহা ফুলের কী বাহার ! সেই সব গাছের ফুল ছিঁড়ে এনে, তোর  কামনার  আগুনে সেঁকে, জোছন ভরা আলো করা  রূপে মাতাল হওয়া  গন্ধে, আকুল হয়ে; হারামী  পুরুষ ! তুই প্রেমের মায়া জাল  ফেলে, রঙ্গিন  স্বপ্নের জাল বুনে, ফুলের সারা শরীরে আদরের বন্যায়, বন্য ভয়ঙ্কর তোর কঠিন পৌরুষের আঘাতে আঘাতে, ফুলের মতন নারীর পেলব শরীর থেকে খুবলে খেলি  একে  একে  চোখ  ঠোঁট,  স্তন, নাভীমূল, মাতৃ যোনী;  হায় ! পুরুষ যে দ্বারে তোর জন্ম, ঐ খানেই তোর মরন ! জোয়ান মরোদ গায়ে গতরে খেটে  মানব জমীন  চাষ  করে, সাজানো তোর  বাগানে  শত ফুল বিকশিত  কর, নইলে তুই দোজখের  আগুনে, নরকে  ফুট ন্ত তেলে পুড়বি, ভয়  হয় না তোর ? ওপরওয়ালার  ভয়াবহ  মারে -এডসে  রোগে বা  পক্ষাঘাতে-পঙ্গু  হয়ে বিছানায় শুয়ে ঈ শ্বরকে  হাজার ডাকলেও  তিনি  মুখ  ফিরিয়ে  থাকবেন, নারী যিনি,  সৃস্টির অধীশ্বরী !  ভগবতী যার  স্তন দুগ্ধে  শিশুর মরণ বাঁচন; তাঁকে ধ র্ষন  ভালোবাসা  ছলনায়,  জানি, খলের  ছলের  অভাব হয় না কখন, নারীর  সৌন্দর্য  নিয়ে 

কবি বিকাশ দাসের এক গুচ্ছ কবিতা সিঁড়ী এবং অন্যান্ন