সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

কাজী নজরুল ইসলাম এর অভিশাপ

শিরোনাম অভিশাপ   
         কাজী নজরুল ইসলাম                      

বাংলা কবিতা
কাজী নজরুল ইসলাম এর অভিশাপ 
যেদিন আমি হারিয়ে যাব, বুঝবে সেদিন বুঝবে
অস্তপারের সন্ধ্যাতারায় আমার খবর পুঁছবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
ছবি আমার বুকে বেধে
পাগল হয়ে কেঁদে কেঁদে
ফিরবে মরু কানন গিরি
সাগর আকাশ বাতাশ চিরি
সেদিন আমায় খুজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
স্বপন ভেঙ্গে নিশুত রাতে, জাগবে হঠাৎ চমকে
কাহার যেন চেনা ছোয়ায় উঠবে ও-বুক ছমকে-
জাগবে হঠাৎ ছমকে,
ভাববে বুঝি আমিই এসে
বসনু বুকের কোলটি ঘেষে
ধরতে গিয়ে দেখবে যখন
শুন্য শয্যা মিথ্যা স্বপন
বেদনাতে চোখ বুজবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে
গাইতে গিয়ে কন্ঠ ছিড়ে আসবে যখন কান্না
বলবে সবাই- সেই যে পথিক তার শোনানো গান না?-
আসবে ভেঙ্গে কান্না,
পড়বে মন আমার সোহাগ
কন্ঠে তোমার কাদবে বেহাগ
পড়বে মনে আমার ফাকি
অশ্রুহারা কঠিন আখি
ঘন ঘন মুছবে,
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আবার যেদিন শিউলী ফুলে ভরবে তোমার অঙ্গন
তুলতে সে ফুল গাথতে মালা, কাপবে তোমার কঙ্কণ
কাদবে কুটির অঙ্গন,
শিউলী ঢাকা মোর সমাধি
পড়বে মনে উঠবে কাদি
বুকের জ্বালা করবে মালা
চোখের জলে সেদিন বালা
মুখের হাসি ঘুচবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আসবে আবার আশিন হাওয়া, শিশির ছেচা রাত্রি
থাকবে সবাই- থাকবে না এই মরন পথের যাত্রীই
আসবে শিশির রাত্রি,
থাকবে পাশে বন্ধু সুজন
থাকবে রাত বাহুর বাধন
বধুর বুকের পরশনে
আমার পরশ আনবে মনে
বিষিয়ে ও বুক উঠবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আসবে তোমার শীতের রাতি, আসবে নাকো আর সে
তোমার সুখে পড়তো বাধা থাকলে যে জন পার্শ্বে
আসবে নাকো আর সে,
পড়বে মন মোর বাহুতে
মাথা থুয়ে যেদিন শুতে
মুখ ফিরিয়ে থাকতে ঘৃণায়
সেই স্মৃতি নিত বিছানায়
কাটা হয়ে ফুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আবার গাঙ্গে আসবে জোয়ার, দুলবে তরী রঙ্গে
সেই তরীতে হয়তো কেহ থাকবে তোমার সঙ্গে
দুলবে তরী রঙ্গে,
পড়বে মনে সে কোন রাতে
এক তরীতে ছিলে সাথে
এমনি গাঙে ছিল জোয়ার
নদীর দুধার এমনি আধার
তেমনি তরী ছুটবে-
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
তোমার সখার আসবে যেদিন এমনি কারা বন্ধ
আমার মত কেদে কেদে হয়তো হবে অন্ধ
সখার কারা বন্ধ,
বন্ধু তোমার হানবে হেলা
ভাঙ্গবে তোমার সুখের খেলা
দীর্ঘ লো কাটবে না আর
বইতে প্রাণ শ্রান্ত এ ভার
সরন মনে যুঝবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
ফুটবে আবার দোলন চাপা, চৈতি রাতের চাদনী
আকাশ ছাওয়া তারায় তারায় বাজবে আমার কাদনি
চৈতি রাতের চাদনী
ঋতুর পরে ফিরবে ঋতু
সেদিন হে-মোর সোহাগ ভীতু
চাইবে কেদে নীল নভোগায়
আমার মত চোখ ভরে চায়
যে তারা, তায় খুজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আসবে ঝড়ি, নাচবে তুফান টুটবে সকল বন্ধন
কাপবে কুটির সেদিন ত্রাসে, জাগবে বুকে ক্রন্দন
টুটবে যবে বন্ধন,
পড়বে মনে নেই সে সাথে
বাধতে বুকে দুঃখ রাতে-
আপনি গালে যাচবে চুমা
চাইবে আদর মাগবে ছোওয়া
আপনি যেচে চুমবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।
আমার বুকের যে কাটা ঘা, তোমায় ব্যাথা হানত
সেই আঘাতই যাচবে আবার হয়তো হয়ে শ্রান্ত
আসব তখন পান্থ,
হয়তো তখন আমার কোলে
সোহাগ লোভে পড়বে ঢোলে
আপনি সেদিন সেধে-কেদে
চাপবে বুকে বাহুয় বেধে
চরন চুমে পূজবে
বুঝবে সেদিন বুঝবে।



 কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু ! নিচে দেখুন কমেন্ট বক্স

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

প্যারিসের চিঠি

প্যারিসের চিঠি শিরোনাম  : প্যারিসের চিঠি   লতিফুল ইসলাম শিবলী প্রিয় আকাশি, গতকাল ঠিক দুপুরে তোমার চিঠি পয়েছি। খামের উপর নাম ঠিকানা পড়েই চিনতে পেরেছি তোমার হাতের লেখা; ঠিকানা পেলে কিভাবে লেখনি; কতদিন পর ঢাকার চিঠি; তাও তোমার লেখা, ভাবতে পারো আমার অবস্থা?? গতকাল প্যারিসে ঝরেছিলো এ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গা তুষারপাত। তামাক ফুরিয়ে গেছে আনতে পারিনি; এই প্রথম আমি অনেকটা সময় নিয়ে ভুলেছিলাম তামাকের গন্ধ। তোমার চিঠিতে পরিবর্তন আর বদলে যাওয়ার সংবাদ; তুমি কষ্ট পেয়ে লিখেছো - রাত্রির ঢাকা এখন নিয়নের স্নিগধতা ছেড়ে নিয়েছে উতকট সোডিয়ামের সজ্জা, আমাদের প্রিয় রমনা রেস্তোরা এখন কালের সাক্ষী, শীতের বইমেলা পরিণত হয়েছে মিনাবাজারে, টি এস সি'র চত্বরে যেন উপ্তপ্ত বৈরুত। বদলে যাওয়া কষ্টের অপর নাম স্বৃতি এখন তাই নিয়ে বুঝি মেতে আছো; এই পরবাসে আমার চোখের সামনেও বদলে যেতে দেখলাম কত সুদুর ইতিহাস- বালির বাধের মতন ভেসে গেল বার্লিন প্রাচীর ... ইংলিস চ্যানেলের তল দিয়ে হুইসেল বাজিয়ে চলছে ট্রেন; ইউরোপের মানচিত্র এখন রুটি হয়ে গেছে, ক্ষিদে পেলেই ছিড়ে ছিড়ে খাও, স্বাধীনতা মানেই যেন উদর পুর্তি...

সৈয়দ শামসুল হক এর কবিতা "আমার পরিচয়"

সৈয়দ শামসুল হক এর কবিতা  "আমার পরিচয়" শিরোনাম     আমার পরিচয় আমি জন্মেছি বাংলায় আমি বাংলায় কথা বলি। আমি বাংলার আলপথ দিয়ে ,   হাজার বছর চলি। চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে। তেরশত নদী শুধায় আমাকে ,   কোথা থেকে তুমি এলে   ? আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে। আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে। এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে। এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে। আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে আমি তো এসেছি   ‘ কমলার দীঘি ’ ‘ মহুয়ার পালা ’   থেকে। আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে। এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে। এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে। আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে ...

কবি বিকাশ দাসের এক গুচ্ছ কবিতা সিঁড়ী এবং অন্যান্ন