সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

প্যারিসের চিঠি

paris er chithi
প্যারিসের চিঠি
শিরোনাম  :প্যারিসের চিঠি
 লতিফুল ইসলাম শিবলী


প্রিয় আকাশি,
গতকাল ঠিক দুপুরে তোমার চিঠি পয়েছি। খামের উপর নাম ঠিকানা পড়েই চিনতে পেরেছি তোমার হাতের লেখা;
ঠিকানা পেলে কিভাবে লেখনি; কতদিন পর ঢাকার চিঠি;
তাও তোমার লেখা, ভাবতে পারো আমার অবস্থা??

গতকাল প্যারিসে ঝরেছিলো এ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গা তুষারপাত।
তামাক ফুরিয়ে গেছে আনতে পারিনি; এই প্রথম আমি অনেকটা সময় নিয়ে ভুলেছিলাম তামাকের গন্ধ। তোমার চিঠিতে পরিবর্তন আর বদলে যাওয়ার সংবাদ; তুমি কষ্ট পেয়ে লিখেছো - রাত্রির ঢাকা এখন নিয়নের স্নিগধতা ছেড়ে নিয়েছে উতকট সোডিয়ামের সজ্জা,
আমাদের প্রিয় রমনা রেস্তোরা এখন কালের সাক্ষী,
শীতের বইমেলা পরিণত হয়েছে মিনাবাজারে,
টি এস সি'র চত্বরে যেন উপ্তপ্ত বৈরুত।
বদলে যাওয়া কষ্টের অপর নাম স্বৃতি এখন তাই নিয়ে বুঝি মেতে আছো;
এই পরবাসে আমার চোখের সামনেও
বদলে যেতে দেখলাম কত সুদুর ইতিহাস-
বালির বাধের মতন ভেসে গেল বার্লিন প্রাচীর ...
ইংলিস চ্যানেলের তল দিয়ে হুইসেল বাজিয়ে চলছে ট্রেন;
ইউরোপের মানচিত্র এখন রুটি হয়ে গেছে,
ক্ষিদে পেলেই ছিড়ে ছিড়ে খাও,
স্বাধীনতা মানেই যেন উদর পুর্তি ...
তুমি লিখেছ - "তোমাকে ভুলেগেছি কিনা?"
প্রিয় আকাশি,
আমি জেনে গেছি-
পৃথিবীতে সবচেয়ে কঠিন কাজ ভুলে থাকা;
স্বৃতি থেকে পালিয়ে বাচার জন্য এই সুদীর্ঘ প্রবাসের অর্ধেকটা কাটিয়েছি বোহেমিয়ানদের মত ঘুরে ঘুরে
মাদ্রিদ থেকে হামর্বুগ;
নিউক্যাসল নেপোলি থেকে প্রাগ বুখারেষ্ট মেসিডোনিয়া;
নর্থ সি থেকে মেডিটেরিয়ান কিংবা ব্ল্যাক সি।
তবু বাচতে পারিনি স্বৃতি থেকে।
ফ্রানকফুটের বইমেলায় নতুন বইয়ের গন্ধে মনে পড়েছে তোমাকে।
সিসটাইন চ্যাপেলের
লাস্ট জাজমেন্টের মত মহান সৃষ্টির সামনে দাঁড়িয়ে
প্রথমেই মনে পড়েছে তোমাকে।
সিসিলির কার্নিভেলে এথেন্সের কফিশপে জমজমাট কবিতা পাঠের আসরে মনে পড়েছে তোমাকে
সুইজারল্যান্ডের লেকের কাছে স্বচ্ছ জলে নিজের ছায়ার পাশে যাকে খুজেছি, সে তুমি;
ভাটিক্যানের প্রার্থনা সভা শেষে এক গ্রীক তরুণীকে বাংলায় কি বলেছিলাম জানো?
বলেছিলাম- 'তুমি আমার আকাশী হবে?'
ভুলতে পারেনি তোমাকে, শত চেষ্টা করেও পারিনি

আর কেউ না জানুক অসংখ্য জিপসি রাত জানে সেই না ভুলতে পারা ইতিহাস।
তুমি জানতে চেয়েছো প্যারিসের কথা- সত্যি বলতে কি,
প্যারিস খুলে দিয়েছে আমার আত্নার চোখ, সংগীত আর শিল্পের অভীন্ন সুর আমি শুধু প্যারিসেই শুতেছি।
কর্নসাটে যতবার মোর্জাট কিংবা বিতোভেন শুনেছি
ততবারই কেন যেন চিরদুখী পাগল ভিনসেন্ট ভ্যানগগের কথা মনে পড়েছ।
সমস্ত প্যারিসের রাস্তায় গ্যালারিতে ফেষ্টিভেলে খুজে ফিরেছি ভিনসেন্টের কষ্ট।
তোমার প্রিয় গায়ক জিম মরিসনের শেষ দিনগুলো কেটেছে এই প্যারিসে
প্যারিসেই জিমের কবর। অগনিত শিল্পীর কষ্ট থেকে প্যারিস পেয়েছে সৌন্দর্য, কষ্টই প্যারিসের ঐশ্বর্য।
আমাদের সুর্বন সময়ের স্বপ্নের প্যারিসে আজ নিজেকে ভীষন একা মনে হয়
এলোমেলো পড়ে আছি শিল্প সাহিত্যের এই জাগযজ্ঞে
তীব্র শীতের জন্য শ্বাস কষ্ট ভোগার মাঝে মাঝে
এইতো সেদিন আবারো বদলালাম চশমার কাচ।
প্রতিনিয়ত হেরে যাচ্ছি, সময়ের কাছে;
তুমি মনে রেখো পরির্বতনের দমকা হাওয়ায় আমি বদলাইনি এতটুকু।

বাইজেনটাইন সম্রাজ্ঞীর মত তোমাকে ঘিরে থাক পৃথিবীর সমস্ত সুখ।
তুমি আন্দ্যি সুন্দরী হয়ে ওঠো তোমার সৃষ্টিতে।
তুমি ভালো থেকো ... প্রিয় আকাশী



কমেন্ট করতে ভুলবেন না কিন্তু ! নিচে দেখুন কমেন্ট বক্স

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

কবি বিকাশ দাসের এক গুচ্ছ কবিতা সিঁড়ী এবং অন্যান্ন

সৈয়দ শামসুল হক এর কবিতা "আমার পরিচয়"

সৈয়দ শামসুল হক এর কবিতা  "আমার পরিচয়" শিরোনাম     আমার পরিচয় আমি জন্মেছি বাংলায় আমি বাংলায় কথা বলি। আমি বাংলার আলপথ দিয়ে ,   হাজার বছর চলি। চলি পলিমাটি কোমলে আমার চলার চিহ্ন ফেলে। তেরশত নদী শুধায় আমাকে ,   কোথা থেকে তুমি এলে   ? আমি তো এসেছি চর্যাপদের অক্ষরগুলো থেকে আমি তো এসেছি সওদাগরের ডিঙার বহর থেকে। আমি তো এসেছি কৈবর্তের বিদ্রোহী গ্রাম থেকে আমি তো এসেছি পালযুগ নামে চিত্রকলার থেকে। এসেছি বাঙালি পাহাড়পুরের বৌদ্ধবিহার থেকে এসেছি বাঙালি জোড়বাংলার মন্দির বেদি থেকে। এসেছি বাঙালি বরেন্দ্রভূমে সোনা মসজিদ থেকে এসেছি বাঙালি আউল-বাউল মাটির দেউল থেকে। আমি তো এসেছি সার্বভৌম বারোভূঁইয়ার থেকে আমি তো এসেছি   ‘ কমলার দীঘি ’ ‘ মহুয়ার পালা ’   থেকে। আমি তো এসেছি তিতুমীর আর হাজী শরীয়ত থেকে আমি তো এসেছি গীতাঞ্জলি ও অগ্নিবীণার থেকে। এসেছি বাঙালি ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেনের থেকে এসেছি বাঙালি জয়নুল আর অবন ঠাকুর থেকে। এসেছি বাঙালি রাষ্ট্রভাষার লাল রাজপথ থেকে এসেছি বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর থেকে। আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে ...